বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ০৭:৪০ অপরাহ্ন

ভয়ঙ্কর বন্ধু……!!!

স্বদেশ ডেস্ক: একসঙ্গে মুদি দোকানে চাকরি করার সুবাদে মো. সুমন ও সোহেল হোসেনের পরিচয়। সময়ের সঙ্গে গড়ে ওঠে এ দুই যুবকের পরম বন্ধুত্ব। অনেক দিনরাত গল্প আড্ডায় একসঙ্গে কেটেছে তাদের। পরিবারের সুখ-দুঃখও একে অপরকে জানিয়েছেন। পরিবারের কথা বলে সুমনের কাছ থেকে সোহেল টাকা ধার নেয়। এর মধ্যে অনিয়মের কারণে দোকান থেকে সোহেল একমাস আগে চাকরিচ্যুত হয়। অভাব-অনটনে মানসিকভাবে বিধ্বস্ত হয়ে সোহেল দিনমজুরের কাছ ধরে। এদিকে ধার নেয়া টাকা ফেরত চাওয়াই যেন বিপদ ডেকে আসে সুমনের জীবনে। কে জানতো, টাকা চাইলেই কৌশলে ডাব খাওয়ানোর কথা বলে ডেকে নিয়ে সুমনকে কুপিয়ে হত্যা করা হবে। আবার বস্তাবন্দি করে নির্জন বাগানে মাটিচাপা দেওয়া হবে। বন্ধু এতো ভয়ঙ্কর হতে পারে লক্ষ¥ীপুরের রামগঞ্জে আলোচিত মুদি দোকানের কর্মচারী সুমন হত্যার ঘটনায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে আসামি বন্ধু সোহেল। ২৯ জুলাই বিকেলে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রামগঞ্জ আমলি আদালতের বিচারক রায়হান চৌধুরী এ জবানবন্দি রেকর্ড করেন। এর আগে পুলিশের কাছে সোহেল একই জবানবন্দি দেয় বলে জানিয়েছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মোহাম্মদ কাওসারুজ্জামান।

এদিকে সুমন হত্যার প্রতিবাদে রামগঞ্জের প্রধান সড়কে মানববন্ধন করে সোনাপুর বাজারের ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার বিপুল সংখ্যক মানুষ। এ সময় বক্তব্য দেন ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম, নিহতের বাবা ইউনুছ আলী, যুবলীগ নেতা মোজাম্মেল হক, মিলন আঠিয়া প্রমুখ। তারা সোহেলের ফাঁসির দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দেন। সোনাপুর বাজার ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম বলেন, পরিকল্পিতভাবে দোকান কর্মচারী সুমনকে হত্যা করা হয়েছে। আমরা আসামি সোহেলের দ্রুত ফাঁসির দাবি জানাই।  আদালত ও থানা সূত্রে জানা যায়, রামগঞ্জ পৌরসভার সোনাপুর বাজারের মো. ইউসুফ আলীর মুদি দোকানে সুমন (২৬) ও সোহেল (২৮) কয়েক বছর ধরে চাকরি করে আসছেন। সুমন কুমিল্লার মুরাদপুরের সুজানগর গ্রামের মো ইউনুছ আলীর ছেলে। সোহেল রামগঞ্জ উপজেলার ভোলাকোট ইউনিয়নের উত্তর নাগমুদ গ্রামের বাবুল মিয়ার ছেলে। একসঙ্গে চাকরি করার সুবাদে তাদের মধ্যে বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে উঠে। সুমনের কাছ থেকে সোহেল টাকা ধার নেয়। তবে কত টাকা তা নিশ্চিতভাবে জানা যায়নি। পাওনা টাকা নিয়ে তাদের মধ্যে প্রায়ই ঝগড়া হতো। প্রায় একমাস আগে অনিয়মের কারণে সোহেল চাকরিচ্যুত হয়। এরপর হঠাৎ ২১ জুলাই রাত থেকে সুমন নিখোঁজ হয়। সম্ভাব্য স্থানগুলোতে খুঁজে না পেয়ে সুমনের বাবা ইউনুছ আলী রামগঞ্জ থানায় ২৭ জুলাই অপহরণের লিখিত অভিযোগ করেন। এ প্রেক্ষিতে পুলিশ ওইদিন বিকেলে সোহেলের বাবা বাবুল মিয়াকে আটক করে থানায় নিয়ে আসেন। বাবাকে আটকের খবর পেয়ে সোহেল রাতেই থানায় এসে আত্মসমর্পণ করে। ২৮ জুলাই হত্যার ঘটনা স্বীকার করে সোহেল। পরে বিকেলে তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী নাগমুদ গ্রামের মিঝি বাড়ির নির্জন বাগান থেকে মাটিচাপা অবস্থায় সুমনের বস্তাবন্দি অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তার হাত, মাথা ও ঘাড়ে কুপিয়ে জখমের চিহ্ন ছিল। মরদেহ উদ্ধারের সময় পুলিশের সঙ্গে সোহেলও উপস্থিত ছিল।

সোহেলের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির বরাত দিয়ে রামগঞ্জ থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোহাম্মদ কাওসারুজ্জামান জানান, আসামি সোহেল একাই বন্ধু সুমনকে হত্যা করেছে। সোনাপুর থেকে ২১ জুলাই বাড়ির পথে এগিয়ে দেয়ার জন্য সুমনকে ডেকে নেয় সোহেল। পরে সোহেল ডাব খাওয়ানোর কথা বলে সুমনকে রাত ১১ টার দিকে বাগানে নিয়ে যায়। সেখানে ধার নেয়া টাকার প্রসঙ্গে দুইজনের কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে দা দিয়ে কুপিয়ে সুমনকে হত্যা করা হয়। পরে প্লাষ্টিকের বস্তাবন্দি করে তার মরদেহ বাগানে মাটি চাপা দেয়া হয়।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877